ঢাকা ১১:১০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৫, ২১ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
জিসাসের কেন্দ্রীয় পদ থেকে হেলাল উদ্দিন হেলাল বহিষ্কার সার্চ ইঞ্জিন সিজন-২: তথ্য-প্রযুক্তির আলোয় বাংলাদেশ সীমান্তে ট্যাপেন্টাডল ট্যাবলেট ও চোরাচালানী মালামাল আটক আহমেদ সাজু’র অ্যাকশন চলচ্চিত্র ‘মৃত্যুদূত’ বাজিমাত দেশে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হলো ইএইচএ-এইচএসবি হেমাটোলজি টিউটোরিয়াল রাজশাহীতে পুকুর ভরাট : প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা, জলাশয় সংকট বৃদ্ধি যশোর সীমান্তে চোরাচালানী মালামাল আটক সাংবাদিকতা ও মিডিয়ার সেরাদের অ্যাওয়ার্ড দেবে ডিজিটাল মিডিয়া ফোরাম (ডিএমএফ) ধান্যখোলা সীমান্তের শূন্যরেখায় প্রিয়জনের মরদেহ শেষবারের মতো দেখলো স্বজনরা যশোর সীমান্তে অবৈধ চোরাচালানী মালামাল আটক

রাজশাহীতে পুকুর ভরাট : প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা, জলাশয় সংকট বৃদ্ধি

নিজস্ব সংবাদদাতা
  • আপডেট সময় : ০৩:১০:০৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩ অক্টোবর ২০২৫ ২৬ বার পড়া হয়েছে
অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

রাজশাহী নগরীর খুলিপাড়া এলাকায় পুকুর ভরাট নিয়ে নতুন করে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, বিএনপির হাইব্রিড নেতা এস এম এখলাস আহেমদ রমি প্রশাসনের একাধিক নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ধাপে ধাপে পুকুর ভরাট করে ফেলছে।

প্রথমদিকে ভরাটের চেষ্টা চললেও এলাকাবাসী সরাসরি বাধা দেয়। কিন্তু তাদের কথা তোয়াক্কা না করে এস এম এখলাস আহেমদ রমি ভরাট চালিয়ে যেতে থাকে। বাধ্য হয়ে এলাকাবাসী স্থানীয় উন্নয়ন গবেষণাধর্মী যুব সংগঠন ইয়ুথ এ্যাকশন ফর সোস্যাল চেঞ্জ (ইয়্যাস)-এর সহযোগিতায় মানববন্ধনের আয়োজন করে। গত ৭ই মার্চ শুক্রবার বিকেল ৪টায় ওই পুকুরপাড়েই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধনের পর প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহকারী কমিশনার (ভূমি) এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা এসে ভরাট বন্ধের নির্দেশ দেন।

তবে কয়েক মাস পর আবারও এস এম এখলাস আহেমদ রমি ভরাট শুরু করলে সাংবাদিকদের হস্তক্ষেপে মাত্র দুই ঘণ্টার মধ্যেই তা বন্ধ হয়। পরে প্রশাসনের চাপের মুখে এসি ল্যান্ড ও পরিবেশ অধিদপ্তর রমি এবং তার সহযোগীদের শেষবারের মতো সতর্ক করে।

এরপরও তিনি থেমে থাকেননি। গত ২ তারিখ রাত ১০টা থেকে নতুন কৌশলে আবারও ভরাট শুরু হয়। দুর্গা পূজার বিজয়া দশমীতে প্রশাসন ব্যস্ত থাকবে—এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করা হয়। ধাপে ধাপে প্রতিবার কিছুটা করে ভরাট করতে করতে বর্তমানে পুকুরের বড় অংশ প্রায় নষ্ট হয়ে গেছে। প্রতিবার মাটি ফেলে জলাধারকে ২-৩ হাত পানির জমিতে পরিণত করা হচ্ছে।

কয়েক মাস আগে চারদিক ঘিরে সিটি কর্পোরেশনের ময়লার স্তূপ ফেলার চেষ্টা করাও হয়েছিল । এলাকাবাসীর বাধার মুখে তা ব্যর্থ হলে আবারও সরাসরি মাটি ফেলা শুরু হয়। এবার মাস্তান বাহিনী বসিয়ে দেওয়া হয়, যাতে কেউ বাঁধা দিতে না পারে বা ভিডিও ধারণ করতে না পারে।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, এস এম এখলাস আহেমদ রমি শুধু পুকুর ভরাটেই সীমাবদ্ধ নয়। টিকাপাড়া গোরস্থানের সামনে চিশতীয়া খানকা শরীফে গাঁজার আসর বসানোর অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে, নিজেও প্রখ্যাত গাঁজা সেবনকারী হিসেবে পরিচিত। ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর থেকে তিনি নিজেকে বিএনপি নেতা দাবি করছেন, অথচ স্থানীয় ত্যাগী নেতাদের মতে তিনি হাইব্রিড রাজনীতিক, অর্থের বিনিময়ে বিএনপির পদ পাওয়ার চেষ্টা করছেন। এছাড়া বাঘা উপজেলায় একটি বালুঘাট ইজারা নিয়ে অবৈধভাবে দিনরাত বালু উত্তোলন করছেন। এর ফলে পদ্মা নদীর তীর ভাঙনসহ ভয়াবহ পরিবেশগত বিপর্যয় সৃষ্টি হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, একদিকে নগরীর পুকুর ভরাট, অন্যদিকে অবৈধ বালু উত্তোলন—এই দুটি কর্মকাণ্ডের ফলে শহর ও গ্রামীণ দুই পরিবেশই মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাওয়া, বৃষ্টির পানি নিষ্কাশন ব্যাহত হয়ে জলাবদ্ধতা, কৃষিজমিতে পানির সংকট, নদীভাঙন, মাছ ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের মতো ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।

পুকুর ভরাট করছে কি না জানতে চাইলে এস এম এখলাস আহেমদ রমি বলেন, “আমার সাথে কি আপনার বা অন্য কারো শত্রুতা আছে? আপনি আরেকবার আসেন ঘটনাস্থলে কথা বলি।” ঘটনাস্থলে আসার প্রস্তাব রাজি না হয়ে বারবার ভরাটের বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি শুধু বলেন, “আমি শুধু জানি বাসার সামনে কোনো ডেভেলপার কাজ শুরু করেছে, এছাড়া কী অবস্থা পরে জানাতে পারব।”

ঘটনার বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বোয়ালিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ আবুল কালাম আজাদ বলেন, “বর্তমানে আমি সহ পুরো ফোর্স পূজা ডুবানোর নিরাপত্তার কাজে ডিউটিতে আছি। আপনারা ওহাটসঅ্যাপে পুরো তথ্য পাঠিয়ে দিন, এটা শেষ হলেই ফোর্স পাঠিয়ে কাজ বন্ধ করব। বাকিটা ভূমি কর্মকর্তারা দেখবেন, ওনারাই আইনি ব্যবস্থা নেবেন।”

তিনি আরও জানান, ভূমি অফিস আইনি ব্যবস্থা না নেওয়া পর্যন্ত পুলিশ প্রাথমিকভাবে ভরাট বন্ধে সহযোগিতা করবে।

এদিকে সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ আরিফ হোসেন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মোঃ কবির হোসেনকে একাধিকবার ফোন করা হলেও মধ্যরাত হওয়ায় তাদের সঙ্গে যোগাযোগ সম্ভব হয়নি।

এলাকাবাসী ও ইয়ুথ এ্যাকশন ফর সোস্যাল চেঞ্জ (ইয়্যাস) সংগঠন প্রশাসনের কাছে অবিলম্বে ভরাট কার্যক্রম বন্ধ করা, এস এম এখলাস আহেমদ রমির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া এবং জলাশয় ও নদী রক্ষায় সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন। তারা বলেন, এভাবে জলাশয় দখল চলতে থাকলে নগরীর পরিবেশ ও নাগরিক জীবনে চরম বিপর্যয় নেমে আসবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :

রাজশাহীতে পুকুর ভরাট : প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা, জলাশয় সংকট বৃদ্ধি

আপডেট সময় : ০৩:১০:০৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩ অক্টোবর ২০২৫

রাজশাহী নগরীর খুলিপাড়া এলাকায় পুকুর ভরাট নিয়ে নতুন করে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, বিএনপির হাইব্রিড নেতা এস এম এখলাস আহেমদ রমি প্রশাসনের একাধিক নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ধাপে ধাপে পুকুর ভরাট করে ফেলছে।

প্রথমদিকে ভরাটের চেষ্টা চললেও এলাকাবাসী সরাসরি বাধা দেয়। কিন্তু তাদের কথা তোয়াক্কা না করে এস এম এখলাস আহেমদ রমি ভরাট চালিয়ে যেতে থাকে। বাধ্য হয়ে এলাকাবাসী স্থানীয় উন্নয়ন গবেষণাধর্মী যুব সংগঠন ইয়ুথ এ্যাকশন ফর সোস্যাল চেঞ্জ (ইয়্যাস)-এর সহযোগিতায় মানববন্ধনের আয়োজন করে। গত ৭ই মার্চ শুক্রবার বিকেল ৪টায় ওই পুকুরপাড়েই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধনের পর প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহকারী কমিশনার (ভূমি) এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা এসে ভরাট বন্ধের নির্দেশ দেন।

তবে কয়েক মাস পর আবারও এস এম এখলাস আহেমদ রমি ভরাট শুরু করলে সাংবাদিকদের হস্তক্ষেপে মাত্র দুই ঘণ্টার মধ্যেই তা বন্ধ হয়। পরে প্রশাসনের চাপের মুখে এসি ল্যান্ড ও পরিবেশ অধিদপ্তর রমি এবং তার সহযোগীদের শেষবারের মতো সতর্ক করে।

এরপরও তিনি থেমে থাকেননি। গত ২ তারিখ রাত ১০টা থেকে নতুন কৌশলে আবারও ভরাট শুরু হয়। দুর্গা পূজার বিজয়া দশমীতে প্রশাসন ব্যস্ত থাকবে—এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করা হয়। ধাপে ধাপে প্রতিবার কিছুটা করে ভরাট করতে করতে বর্তমানে পুকুরের বড় অংশ প্রায় নষ্ট হয়ে গেছে। প্রতিবার মাটি ফেলে জলাধারকে ২-৩ হাত পানির জমিতে পরিণত করা হচ্ছে।

কয়েক মাস আগে চারদিক ঘিরে সিটি কর্পোরেশনের ময়লার স্তূপ ফেলার চেষ্টা করাও হয়েছিল । এলাকাবাসীর বাধার মুখে তা ব্যর্থ হলে আবারও সরাসরি মাটি ফেলা শুরু হয়। এবার মাস্তান বাহিনী বসিয়ে দেওয়া হয়, যাতে কেউ বাঁধা দিতে না পারে বা ভিডিও ধারণ করতে না পারে।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, এস এম এখলাস আহেমদ রমি শুধু পুকুর ভরাটেই সীমাবদ্ধ নয়। টিকাপাড়া গোরস্থানের সামনে চিশতীয়া খানকা শরীফে গাঁজার আসর বসানোর অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে, নিজেও প্রখ্যাত গাঁজা সেবনকারী হিসেবে পরিচিত। ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর থেকে তিনি নিজেকে বিএনপি নেতা দাবি করছেন, অথচ স্থানীয় ত্যাগী নেতাদের মতে তিনি হাইব্রিড রাজনীতিক, অর্থের বিনিময়ে বিএনপির পদ পাওয়ার চেষ্টা করছেন। এছাড়া বাঘা উপজেলায় একটি বালুঘাট ইজারা নিয়ে অবৈধভাবে দিনরাত বালু উত্তোলন করছেন। এর ফলে পদ্মা নদীর তীর ভাঙনসহ ভয়াবহ পরিবেশগত বিপর্যয় সৃষ্টি হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, একদিকে নগরীর পুকুর ভরাট, অন্যদিকে অবৈধ বালু উত্তোলন—এই দুটি কর্মকাণ্ডের ফলে শহর ও গ্রামীণ দুই পরিবেশই মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাওয়া, বৃষ্টির পানি নিষ্কাশন ব্যাহত হয়ে জলাবদ্ধতা, কৃষিজমিতে পানির সংকট, নদীভাঙন, মাছ ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের মতো ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।

পুকুর ভরাট করছে কি না জানতে চাইলে এস এম এখলাস আহেমদ রমি বলেন, “আমার সাথে কি আপনার বা অন্য কারো শত্রুতা আছে? আপনি আরেকবার আসেন ঘটনাস্থলে কথা বলি।” ঘটনাস্থলে আসার প্রস্তাব রাজি না হয়ে বারবার ভরাটের বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি শুধু বলেন, “আমি শুধু জানি বাসার সামনে কোনো ডেভেলপার কাজ শুরু করেছে, এছাড়া কী অবস্থা পরে জানাতে পারব।”

ঘটনার বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বোয়ালিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ আবুল কালাম আজাদ বলেন, “বর্তমানে আমি সহ পুরো ফোর্স পূজা ডুবানোর নিরাপত্তার কাজে ডিউটিতে আছি। আপনারা ওহাটসঅ্যাপে পুরো তথ্য পাঠিয়ে দিন, এটা শেষ হলেই ফোর্স পাঠিয়ে কাজ বন্ধ করব। বাকিটা ভূমি কর্মকর্তারা দেখবেন, ওনারাই আইনি ব্যবস্থা নেবেন।”

তিনি আরও জানান, ভূমি অফিস আইনি ব্যবস্থা না নেওয়া পর্যন্ত পুলিশ প্রাথমিকভাবে ভরাট বন্ধে সহযোগিতা করবে।

এদিকে সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ আরিফ হোসেন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মোঃ কবির হোসেনকে একাধিকবার ফোন করা হলেও মধ্যরাত হওয়ায় তাদের সঙ্গে যোগাযোগ সম্ভব হয়নি।

এলাকাবাসী ও ইয়ুথ এ্যাকশন ফর সোস্যাল চেঞ্জ (ইয়্যাস) সংগঠন প্রশাসনের কাছে অবিলম্বে ভরাট কার্যক্রম বন্ধ করা, এস এম এখলাস আহেমদ রমির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া এবং জলাশয় ও নদী রক্ষায় সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন। তারা বলেন, এভাবে জলাশয় দখল চলতে থাকলে নগরীর পরিবেশ ও নাগরিক জীবনে চরম বিপর্যয় নেমে আসবে।